ট্রলারের জালে ৬১ মণ ইলিশ, বিক্রি ৩৩ লাখ টাকা! 61 tons of hilsa caught in trawler net, sold for 3.3 million taka!
ট্রলারের
জালে
৬১ মণ ইলিশ, বিক্রি ৩৩ লাখ টাকা!
সাগরে এক ট্রলারে ধরা পড়ে ৬১ মণ ইলিশ, বাজারে বিক্রি হয় ৩৩ লাখ টাকায়! জেলেপাড়ায় আনন্দের জোয়ার।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার উপকূলসংলগ্ন গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ‘এফ বি আল্লাহর দান’ নামের এক ট্রলারের জালে ধরা পড়ে ৬১ মণ ইলিশ। বিশাল এই মাছের পরিমাণ দেখে অবাক হয়ে যান ট্রলারের ২২ জন জেলে। এরপর সোমবার বিকেলে মাছ নিয়ে ট্রলারটি আলীপুর মৎস্যবন্দরে ফিরে আসে। মাছগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয় ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭০৪ টাকায়।
ট্রলারের যাত্রা ও ইলিশ ধরা
আলীপুর ঘাট থেকে বৃহস্পতিবার রওনা হয়ে জেলেরা গভীর সমুদ্রে পাড়ি জমান। প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে সাগরে জাল ফেলেন তাঁরা। শনিবার বিকেলে জাল তুলতেই দেখা যায়, তাতে আটকা পড়েছে বিপুল পরিমাণ রুপালি ইলিশ। জেলে আবু সালেহ জানান, এ যেন এক আসমান থেকে পড়া আশীর্বাদ। পরদিন মাছভর্তি ট্রলারটি বন্দরে ফিরে আসে।
আরও পড়ুন
বাজারে ইলিশের দাম বিশ্লেষণ
বিএফডিসির আওতাধীন মেসার্স খান ফিসের আড়তে মাছগুলো নিলামে বিক্রি হয়। আড়তটির ব্যবস্থাপক সাগর মিয়া জানান:
· ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ: ৭৩,০০০ টাকা/মণ
· ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ: ৫৮,০০০ টাকা/মণ
· ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ: ৪৪,০০০ টাকা/মণ
এছাড়া, প্রায় ৪০ হাজার টাকার অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে ট্রলারটির মাছ বিক্রি হয় ৩৩,৪৮,৭০৪ টাকা।
আগের রেকর্ড: 'এফ বি সাদিয়া-২' এর সাফল্য
এর আগেও ঠিক একই এলাকা থেকে ৯ জুলাই ‘এফ বি সাদিয়া-২’ নামের ট্রলার ৬৫ মণ ইলিশ নিয়ে ফিরে আসে। তখন সেই মাছ মেসার্স খান ফিসের কাছে বিক্রি হয় ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ একের পর এক বড় ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরছে সাফল্যের গল্প নিয়ে।
জেলেদের আনন্দে উৎসবমুখর পরিবেশ
ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে ফিরে আসার পর আলীপুর ও আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। ট্রলারের প্রতিটি জেলের মুখে হাসি। স্থানীয় বাজারেও ভিড় দেখা গেছে। এমন সাফল্য বহুদিন পর এসেছে বলে জানান মৎস্যজীবীরা।
আরও পড়ুন
বিশেষজ্ঞ মত: কী বলছেন মৎস্য কর্মকর্তা?
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, “জেলেরা এখন ভালোই ইলিশ পাচ্ছেন। তবে গভীর সমুদ্রেই মাছ বেশি মিলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাছের সরবরাহ আরও বাড়বে।”
তিনি আরও জানান, সাগরের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় এখন ইলিশের ঝাঁক ঘুরছে। আর জেলেরা সে জায়গাগুলো শনাক্ত করতে পারায় এই সাফল্য পাচ্ছেন।
গভীর সমুদ্র: ইলিশের সম্ভাবনার নতুন ঠিকানা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ আহরণ বাড়ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সমুদ্রের গভীর অঞ্চলে বড় আকারের ও বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। এর পেছনে প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন অবদান রাখছে, তেমনি জেলেদের দক্ষতাও বাড়ছে।
প্রযুক্তি ও আধুনিকতা: সাফল্যের চাবিকাঠি
বর্তমানে অনেক ট্রলারে GPS, সনার ফিশ ফাইন্ডার, রাডারসহ আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জেলেরা সাগরের নির্দিষ্ট স্থানে মাছের অবস্থান জানতে পারছেন, ফলে ইলিশ ধরা হচ্ছে নির্ভুলভাবে
পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ও আহরণের ভারসাম্য
অতিরিক্ত ইলিশ আহরণ পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ইলিশ একটি মৌসুমি ও অভিবাসী মাছ, তাই এর প্রজননের সময়গুলোতে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। টেকসই মাছ শিকার নীতিমালা ছাড়া ভবিষ্যতের জন্য ইলিশ রক্ষা করা কঠিন হবে।
সরকারের উদ্যোগ ও সহায়তা প্রকল্প
সরকার ইতিমধ্যে জেলেদের জন্য কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে:
· জেলে কার্ড ও রেশন
· ট্রলার মেরামত সহায়তা
· মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম
· জেলেদের প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা কিট প্রদান
এসব সহায়তা জেলেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে ও নিরাপদে গভীর সমুদ্রে যাওয়ার পথ সুগম করছে।
স্থানীয় অর্থনীতিতে ইলিশের প্রভাব
ইলিশ এখন শুধু খাদ্য নয়, এটি দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে। একটি ট্রলারের সাফল্য মানে অনেক জেলের পরিবারের স্বচ্ছলতা, স্থানীয় বাজারে টাকার প্রবাহ এবং জীবনের পরিবর্তন।
আরও পড়ুন
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও বাজার পরিস্থিতি
ট্রলারে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই আশাবাদী এই মৌসুমে বাজারে ইলিশ সহজলভ্য হবে। তবে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এত দামে ইলিশ বিক্রি হওয়ায় বাজারে দাম বেড়ে যাবে কিনা!
সমুদ্রই এখন সোনার খনি!
এই ঘটনা আবার প্রমাণ করল—বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা একটি সম্ভাবনার বিশাল খনি। শুধুমাত্র পরিকল্পনা, প্রযুক্তি এবং নিয়ন্ত্রিত আহরণে আমরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি। জেলেদের এমন সাফল্য দেশের অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক।
১. কত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে ট্রলারটিতে?
→ ৬১ মণ ইলিশ।
২. কোথা থেকে মাছ ধরা হয়?
→ কুয়াকাটার ১৭০ কিলোমিটার গভীর বঙ্গোপসাগর থেকে।
৩. ইলিশের দাম কত ছিল প্রতি মণ?
→ সর্বোচ্চ ৭৩,০০০ টাকা/মণ পর্যন্ত।
৪. মাছ কোথায় বিক্রি করা হয়?
→ বিএফডিসির মেসার্স খান ফিসের আড়তে।
৫. ইলিশ ছাড়াও আর কী ধরা পড়ে?
→ প্রায় ৪০ হাজার টাকার
অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ।